প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কত টাকা লোন দেয় | পুর্নাঙ্গ গােইড ২০২৫
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কত টাকা লোন দেয়, বিশেষ করে বাংলাদেশের মানুষের অনেকেরই জানার ইচ্ছা থাকে। এর একটাই মূল কারণ একটু সচ্ছলভাবে বেঁচে থাকার এই উদ্দেশ্যকেই সামনে রেখে অনেকেই প্রবাসে পাড়ি জমাচ্ছে।
এই কারণে একটাই প্রশ্ন থেকে যায় এই লোনের জন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক সুদের হার কত, আরে লোনের প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক আবেদন প্রক্রিয়া, শর্ত এবং সুবিধা অসুবিধা গুলো কি কি থাকতে পারে আজকে আমি সবটাই আপনাদের জানিয়ে দেবো।
সূচিপত্র ঃ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কত টাকা লোন দেয়
- প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিয়ে কিছু কথা
- প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কি ?
- প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কত টাকা লোন দেয় ২০২৫
- প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোনের সুদের হার
- প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন পাবার যোগ্যতা
- প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন আবেদন প্রক্রিয়া
- কেন প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিবেন ?
- FAQ - সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর
- শেষ কথা ঃ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন প্রসঙ্গে
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিয়ে কিছু কথা
বাংলাদেশ একটি দারিদ্র্য প্রধান দেশ এজন্যই বর্তমানে বাংলাদেশের অনেকেই একটু ভালোভাবে বাঁচার আশায় কর্মের জন্য বিদেশ গমন করছে। কিন্তু আর্থিক সমস্যার কারণে অনেকেই নির্ভর করতে হয় লোনের উপর। এজন্যই তারা চায় প্রবাস দিয়ে কর্ম করে সেই কর্মের টাকা দিয়ে লোন পরিশোধ করতে।বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ শ্রমিক বিদেশ গিয়ে দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধি করছে। আর তাদের পাঠানো সেই অর্থ বা রেমিটেন্স দেশের উন্নয়নের প্রধান চালিকা শক্তি।
তবে বিদেশে যাওয়ার সময় বা ফিরে এসে কোন একটা ব্যবসা শুরু করার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন হয়। এজন্য বাংলাদেশ সরকার প্রবাস কল্যাণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছে, যা প্রবাসীদের তাদের পরিবারকে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করে সহযোগিতা করে থাকে। আর সেজন্যই অনেকেই জানতে চাই প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কত টাকা লোন দেয়? আজকের এই আর্টিকেল আমরা এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ আলোচনা করব।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কি ?
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন সম্পর্কে জানতে হলে শুরুতেই বুঝতে হবে প্রবাসী কল্যাণ
ব্যাংক মূলত কি?২০১০ সালে বাংলাদেশ সরকার প্রবাসীদের কল্যাণ ও পুনর্বাসনের
উদ্দেশ্যকে মাথায় রেখে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে। ব্যাংকটি শুরুতেই
১ বিলিয়ন অর্থ নিয়ে তাদের যাত্রা আরম্ভ করে, সেই অর্থের ৯৫ ভাগ আসে
প্রবাসী কল্যাণ সংস্থা থেকে এবং বাকি পাঁচ ভাগ আসে বাংলাদেশ সরকারের
মাধ্যমে।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে
বিদেশ যাওয়ার সময় অনেকেরই প্রয়োজনীয় টাকা গুছিয়ে উঠতে পারে না।
- এই প্রয়োজনীয় অর্থ প্রদানের মাধ্যমে তাদের সহায়তা করা,
- বিদেশ থেকে ফিরে আসার পর নতুন করে ব্যবসা শুরু করার মাধ্যমে তাদের পারিবারিক সচ্ছলতা ফিরে আসে এই সুযোগ করে দেওয়া,
- এবং তাদের পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তা প্রদান করা।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কত টাকা লোন দেয় ২০২৫
আপনাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা জানেন না প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক এর লোনের পরিমাণ
কত। আজকে আমার এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদের জানিয়ে দেবো প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক
থেকে আপনি সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন কত টাকা পর্যন্ত লোন নিতে পারবেন। আরো
জানতে পারবেন কি কি খাতের ওপর এই ব্যাংক থেকে লোন নেয়া যায় চলুন পর্যায়ক্রমে
তা জেনে নেয়া যাক।
বিদেশ গমন ঋণ
বিদেশে যারা চাকরির সুযোগ পেয়েছে তারা মূলত এই ঋণ নিতে পারবে, যতক্ষণ না বিদেশে
চাকরির সুযোগ পাচ্ছেন ততক্ষণ এই ঋণ আবেদন করতে পারবেন না। নতুন ভিসার জন্য আপনি
সর্বোচ্চ তিন লক্ষ টাকা ঋণ দেয়া হবে, রি এন্ট্রি ভিসার ক্ষেত্রেও সর্বোচ্চ তিন
লক্ষ টাকা ঋণ দেওয়া হয়। সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা ঋণ দেওয়া হয়, এই ঋণ
ভিসা, টিকেট, প্রশিক্ষণ, মেডিকেল টেস্ট এবং বিভিন্ন ধরনের খরচ মেটাতে অনেক
সহায়তা করে।
পুনর্বাসন ঋণ
অনেকদিন যাবত বিদেশে থাকার পর তারা দেশে ফিরে আসে । অনেকেই দেশে ফিরে কোন না কোন
ব্যবসা শুরু করতে চাই । তাদের এই ব্যবসা শুরু করার জন্য সহজ শর্তে প্রবাসী কল্যাণ
ব্যাংক পুনর্বাসন ঋণ প্রদান করে থাকে। এই ঋণের পরিমাণ থাকে সর্বোচ্চ ১০ লক্ষ টাকা
পর্যন্ত, এই টাকা ব্যবহার করে সার্ভিস সেক্টর, কৃষি ক্ষেত্র, বা ক্ষুদ্র শিল্পের
মতো ব্যবসা শুরু করা যায়
ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ঋণ
প্রবাসে থাকা ব্যক্তির স্ত্রী বা তাদের পরিবার ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসাবে, দোকান, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করার জন্য এই ঋণ নিতে পারে। এই ঋণের পরিমাণ ৫০,০০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোনের সুদের হার
বাংলাদেশের যে ব্যাংকে যান না কেন লোন নিতে হলে সুদ দেওয়া লাগবে। প্রবাসী কল্যাণ
ব্যাংক সুদের হার বাংলাদেশের অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় অনেক কম। যার কারণে
অনেকেই সহজ শর্তে লোন নিয়ে বিদেশ গিয়ে নিশ্চিন্তে তারা কর্ম করতে পারে এবং
তাদের কর্মের অর্থ দেশে পাঠাতে পারে যাকে আমরা রেমিটেন্স বলে থাকি, আর এই
রেমিটেন্স দেশের উন্নয়নের জন্য অনেক বড় ভূমিকা পালন করে । তবে দেখে নেয়া যাক
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোনের সুদের হার
- বিদেশ গমন ঋণ ঃ ৯% হারে তারা সরল সুদে বিদেশ গমন ঋণ দিয়ে থাকে।
- পুনর্বাসন ঋণ ঃ ৯% থেকে ১০% হারে পুনর্বাসন ঋণ দেয়।
- ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ঋণ ঃ শত করা ৯% থেকে ১০% ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ঋণ প্রদান করে।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোনের সুদের হার তাদের নীতিমালা অনুযায়ী অনেক সময় কম
বেশি হয়ে থাকে।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন পাবার যোগ্যতা
আপনি চাইলেই প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে যেকোনো সময় লোন নিতে পারবেন না। আপনি যতই বাংলাদেশী নাগরিক হোন না কেন প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন নিতে হলে তাদের নীতিমালা অনুযায়ী আপনার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে, তবেই আপনি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারবেন।
অবশ্যই আপনাকে বৈধ পাসপোর্ট ধারী শ্রমিক বা চাকরি প্রার্থী হতে হবে, প্রবাস থেকে ফেরত আশা শ্রমিক হবে, প্রবাসীর স্ত্রী বা পরিবার বর্গের একজন হতে হবে এবং আপনার বয়স সীমা ১৮ থেকে ৫৫ এর মধ্যে হতে হবে। সেই সাথে প্রয়োজন পড়বে কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সেগুলো হলো, পাসপোর্ট ও ভিসার কপি, নিয়ম ও জব কনফারমেশন, জাতীয় পরিচয় পত্র, ছবি এবং আবেদন পত্র।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন আবেদন প্রক্রিয়া
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কত টাকা লোন দেয় এ সম্পর্কে ইতিমধ্যে অনেক কিছু জেনে
গেছেন আশা করি। এখন আপনাদের জানাবো প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন নিতে হলে
কিভাবে আপনাদের আবেদন করতে হবে সে সম্পর্কে। শুরুতেই আপনাকে অবশ্যই আপনার নিকটস্থ
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক শাখায় যোগাযোগ করতে হবে। তাদের নির্ধারিত আবেদন ফরম যা
তারা বিনামূল্যে প্রদান করে থাকে তা সংগ্রহ করে পূরণ করতে হবে।
এই ফরমের সাথে আরো লাগবে ঋণ আবেদনকারের চার কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, এনআইডি
কার্ডের ফটোকপি, বর্তমান ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা সহ ইউনিয়ন পরিষদ বা
পৌরসভার সার্টিফিকেট এর ফটোকপি। আবেদনকারীর পাসপোর্ট এর ফটোকপি, ভিসা কপি ও
ম্যানপাওয়ার স্মার্ট কার্ডের ফটোকপি এবং লেবার কন্ট্রাাক্ট পেপার থাকতে হবে
যদিও (লেবার কন্ট্রাাক্ট পেপার বাধ্যতামূলক নয়)। এ সকল কাগজপত্র
আবেদনকৃত ফরম এর সাথে সংযুক্ত করে আবেদন করতে হবে। আবেদনের সাত কর্ম দিবসের মধ্যে
তারা লোন প্রদান করে থাকে।
কেন প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিবেন ?
এখন আপনার মনে একটাই প্রশ্ন থেকে যায় কেন প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন নিবেন
আরো অন্যান্য বেসরকারি ব্যাংকগুলো থেকে নয় কেন। এই প্রশ্নের উত্তরে আমি বলব
অবশ্যই আপনি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকেই লোন নিবেন, কেননা
অন্যান্য বেসরকারি ব্যাংকের তুলনায় প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোনে সুদের হার
অনেক কম থাকে, সরকারি মালিকানাধীন হওয়ার কারণে আস্থা বেশি পাওয়া যায়, তারা
প্রবাসী ও তাদের পরিবারদের জন্য বিশেষ সুবিধা দিয়ে থাকে এবং পুনর্বাসন ও
ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্য সহজ শর্তে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন প্রদান করে থাকে।
FAQ - সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর
আমি আশা করি ইতোমধ্যে আপনি এই আর্টিকেল এর সম্পূর্ণ পড়েছেন এবং বুঝে গেছেন
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কত টাকা লোন দেয় এবং তার মাধ্যম গুলো কি কি। এরপরও আমাদের
মনে বেশ কিছু প্রশ্ন থেকে যায়, সে সব প্রশ্নের মধ্যে থেকে কিছু প্রশ্ন ও
তার উত্তর নিতে তুলে ধরার চেষ্টা করলাম।
-
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কত টাকা লোন দেয় বিদেশ যাওয়ার জন্য ?
- প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক এর লোনের কিস্তি কত দিনে পরিশোধ করতে হয় ?
উত্তর ঃ এই ঋণের মেয়াদ বা সময় সীমা থাকে নতুন ভিসার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩ বছর এবং রি এন্ট্রি ভিসা ক্ষেত্রে সময়সীমা থাকে সর্বোচ্চ ২ বছর ।
- বিদেশ থাকলেও কি পরিবারের কেউ ঋণ নিতে পারবে ?
উত্তর ঃ হ্যাঁ অবশ্যই যে ব্যক্তি বিদেশে থাকবে তার স্ত্রী বা পরিবার এই ঋণ নিতে পারবে।
শেষ কথা ঃ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন প্রসঙ্গে
বাংলাদেশ দারিদ্রতম দেশগুলোর মধ্যে একটি আর এই দারিদ্রতা দূর করার জন্য শত শত মানুষ বিদেশে কর্মের জন্য পাড়ি দিচ্ছে। একটু সচ্ছলভাবে বাঁচার আশায় তার পরিবার যেন ভালোভাবে খেয়ে পড়ে বাঁচতে পারে তার সন্তান যেন উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে। অথচ তাদের কাছে এই পরিমাণ টাকা থাকে না যে নিজের খরচ করে বিদেশে গিয়ে কর্ম করতে পারে সেজন্য তাদের লোন নেয়ার প্রয়োজন পড়ে।
বেসরকারি অনেক ব্যাংক আছে যারা লোন দিয়ে থাকে তবে আমি আপনাদের বিদেশ যাওয়ার জন্য বেসরকারি ব্যাংকগুলো থেকে লোন না নিয়ে সরকারি মালিকানাধীন প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন গ্রহণ করবেন কেননা এর সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে আমি সম্পূর্ণ আর্টিকেলের মধ্যে বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করেছি তা থেকে বুঝতে পেরেছেন।প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কত টাকা লোন দেয় আশা করি এ প্রসঙ্গে আর বেশি কিছু বলে লেখা বড় করার দরকার নাই।
আপনার মুল্যবান মতামত এখানে টাইপ করুন।প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url