রূপচর্চায় বেসনের উপকারিতা | ত্বক ও চুলের যত্নে বেসনের ব্যবহার
রূপচর্চায় বেসনের উপকারিতাই জানুন কিভাবে বেসন দিয়ে মুখে ব্রনের দাগ, টেন কমানো, তত্ত্বের তৈলাক্ত ভাব দূর করা ও চুলের যত্ন নেওয়া যায়। বেসন ফেস মাক্স বানিয়ে ব্রণ ও দাগের ঘরোয়া সমাধান করতে পারেন।
এবং মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করতে পারেন অনায়াসে যা আপনার ত্বককে প্রাকৃতিকভাবে সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে অনেক কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে। বেসন দিয়ে উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি চুলের যত্নে বেসন অসাধারণ ভূমিকা পালন করে।
সূচিপত্রঃ রূপচর্চায় বেসনের উপকারিতা
- বেসনের পরিচয় ও রূপচর্চায় বেসনে ব্যবহার
- বেসনের পুষ্টিগুণ ও ত্বকের যত্নে এর গুরুত্ব
- বেসন দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করার উপায়
- তৈলাক্ত ত্বকের জন্য বেসনের উপকারিতা
- শুষ্ক ত্বকের জন্য যেভাবে বেসন ব্যবহার করবেন
- উজ্জ্বলতা ও ট্যান দূর করতে বেসনের কার্যকারিতা
- ব্রণের দাগ কমাতে বেসনের ব্যবহার
- বেসন দিয়ে চুলের যত্ন যেভাবে নিবেন
- বেসন ব্যবহারে সতর্কতা
- উপসংহার
বেসনের পরিচয় ও রূপচর্চায় বেসনে ব্যবহার
বেসন কি আমরা সকলেই জানি, যদি আমাদের মধ্যে কেউ এই বেসন কি জিনিস না জেনে থাকে
তবে তাদের জন্য বলছি, বেসন হচ্ছে ছোলা বা আমরা অনেকে বলি বুট মূলত এর গোরা
বা পাউডার। রান্নার কাজে আমরা প্রত্যেকেই ব্যবহার করি। মুখরোচক ভাজাপোড়া তৈরিতে
আমরা সকলেই বেসন ব্যবহার করে অনেক মজাদার খাবার তৈরি করি। আজকে আমরা জানবো
এই বেসন দিয়ে শুধু মজাদার খাবার তৈরি করা নয় বরং বেসন দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়
ও বর্ণের দাগ বা মুখের বিভিন্ন দাগ দূর করে কিভাবে মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করা
যায়।
রূপচর্চায় বেসনের উপকারিতা এই লেখাটির মাধ্যমে আমরা আজকে জানবো রূপচর্চায় বেসনের ব্যবহার কিভাবে করতে হয়, ব্যবহারের সঠিক নিয়ম কানুন ও কি কি সর্তকতা অবলম্বন করা দরকার । আর কথা বেশি না বাড়িয়ে চলুন পোস্টটি সম্পন্ন পড়ি এবং ভালোভাবে জানি রূপচর্চায় বেসনের উপকারিতা । ত্বক ও চুলের যত্নে বেসনের সঠিক ব্যবহার গুলো।
বেসনের পুষ্টিগুণ ও ত্বকের যত্নে এর গুরুত্ব
বেসন হচ্ছে ছোলা বা বুট থেকে তৈরি করা হয়। আর এই ছোলা বা বুটে আছে প্রচুর
পরিমাণে ক্যালসিয়াম, কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ভিটামিন বি , আইরন, ম্যাগনেসিয়াম
এবং ফাইবার। যা মানব দেহের জন্য অতি প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ। এসব পোস্টে গুন
থাকায় ছোলা খেলে শরীরের অনেক রোগ প্রতিরোক্ষ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং শরীরকে করে
তুলে অনেক সতেজ এবং প্রাণবন্ত । ছোলা বা বুটকে গুড়ো করে বেসন তৈরি করলে এসব
পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায় না ।সেজন্যই বেসন বাহ্যিকভাবে ব্যবহার
করলেও ত্বকের অনেক উপকারে আসে।
ত্বকের যত্নে বেসনের গুরুত্ব তুলে ধরতে আমি এই ভাবেই আপনাদেরকে জানাবো ভিটামিন বি
ত্বকে নতুন কোস তৈরি করতে এবং ত্বকের ড্যামেজ সাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করে। আয়রন
ও ম্যাগনেসিয়াম ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে প্রাকৃতিকভাবে ত্বকের উজ্জ্বলতা
বৃদ্ধি করে। ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা ধরে রাখতে সহযোগিতা করে। এ কারণেই বেসন
প্রাচীনকাল থেকে ঘরোয়া রূপচর্চায় অনেক বেশি ব্যবহার হয়ে আসছে।
বেসন দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করার উপায়
রূপচর্চা করতে গেলে ত্বক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। আর তাই আমরা ত্বক পরিষ্কার রাখার জন্য বাজারের অনেক পন্য ব্যবহার করে থাকি। আর এসব পণ্য তৈরিতে কোম্পানিগুলো কেমিক্যাল ব্যবহার করে থাকে। এসব কেমিক্যাল সকলের মুখে সহ্য করতে পারে না, আর তাই এসব পণ্য ব্যবহারে অনেক সময় দেখা যায় অনেকের মুখে রাস বেরিয়ে যায় বা অনেক সময় ত্বক অনেক শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যায়।
অথচ আমরা বেসন ব্যবহার করে ত্বক খুব ভালোভাবে পরিষ্কার করতে পারি। এটি প্রাকৃতিক এবং ন্যাচারাল হওয়ার কারণে ত্বকের উপর কোন প্রকার ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে না। চলুন ত্বক পরিষ্কার করার জন্য বেসনের কিছু ব্যবহার আপনাদের জানাই।
- বেসন এবং কাঁচা দুধ একসাথে মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বকের ময়লা পরিষ্কার হয় এবং ত্বকের আদ্রতা বজায় থাকে।
- গোলাপজল ও বেসন ত্বকে ব্যবহার করলে অতিরিক্ত তেল শোষণ করে নেয় এবং আপনাকে দেয় ফ্রেশ ও প্রশান্তির অনুভূতি।
- বেসন ও মধু ত্বকের ময়েশ্চারাইজার ক্লিনজার হিসেবে কাজ করে থাকে, আর তাই ত্বককে করে তলে অনেক কোমল।
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য বেসনের উপকারিতা
মুখে তৈলাক্ত বা তেলতেলা ভাব আমাদের সবার জন্য বিরক্তির একটি কারণ। মুখের তেলতেলে ভাব ত্বকের উজ্জ্বলতা নষ্ট করে দেয়, তেলতেলে থাকার কারণে মুখে মেকআপ পর্যন্ত ধরতে চায় না নষ্ট হয়ে যায়। আর এসব কারণে অনেকেই হতাশে ভোগেন। মুখের তৈলাক তো তার কারণে লোমকূপ বড় হয়ে যায় এবং সেখানে ময়লা জমে ব্রণ ও ব্ল্যাকহেড তৈরি হয়। ব্রণ ও দাগের ঘরোয়া সমাধান হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন এই প্রাকৃতিক উপাদান বেসন।
যে কারণে বেসন তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ভালো
-
বেসনের শোষণ ক্ষমতা অনেক বেশি থাকায় ত্বকের অতিরিক্ত তেলগুলো টেনে নেয় এর ফলে
ত্বক দীর্ঘক্ষণ সময় ধরে সতেজ থাকে।
-
বেসন ন্যাচারাল স্ক্রাব এর মত কাজ করে , ত্বকের ভিতরে জমে থাকা সকল প্রকার
ময়লা এবং মৃত কোষগুলো দূর করে এবং ত্বকে দেয় ডিপক্লিন।
-
তোকে থাকে ব্যাকটেরিয়া যার কারণে ব্রণ হওয়ার সুযোগ বেশি থাকে, অথচ বেসনে
অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য থাকার কারণে এর ব্যাকটেরিয়া গুলোকে দূর করে
ব্রণ এর মত সমস্যা সারিয়ে তোলে।
- ত্বক এ অতিরিক্ত তেল থাকার কারণে লোমকুপ বড় হয়ে যায়, বেসন নিয়মিত ব্যবহার করলে সংকুচিত হয়ে টাইট ও মসৃণ দেখায়।
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ঘরোয়া মাক্স তৈরি
এক টেবিল চামচ বেসন, কয়েক ফোটা লেবুর রস, গোলাপজল এসব উপাদান একসঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন এবং মুখে লাগান, শুকিয়ে গেলে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন, সপ্তাহে অন্তত দুই থেকে তিন দিন ব্যবহার করলে ত্বকের তৈলাক্ত ভাব ধীরে ধীরে অনেকটাই কমে যাবে।
শুষ্ক ত্বকে যেভাবে বেসন ব্যবহার করবেন
রূপচর্চায় বেসনের উপকারিতাই এবার জানাবো আপনাদের শুষ্ক ত্বকে বেসনের ব্যবহার সম্পর্কে। রুক্ষ এবং শুষ্ক ত্বক এর মূল সমস্যা হল ত্বক ফেটে যাওয়া, টানটান ধরা। প্রধানত এই সমস্যাটি বেশি দেখা যায় শীতকালে। শুষ্ক ত্বকের জন্য চেহারায় নেমে আসে অকাল বার্ধক্যের ছোপ । শুষ্ক ত্বকের জন্য বেসন অনেক উপকারী।
আমাদের মধ্যে অনেকে আছে যারা মনে করে বেসন কেবলমাত্র তৈলাক্ত ত্বকের উপরে ব্যবহার করা যায় বা ত্বকের তৈলাক্ত তাই দূর করে, কিন্তু তা নয় বেসনের সাথে কিছু উপাদানের মিশ্রণে শুষ্ক ত্বককে করে তলে মসৃণ ও মোলায়েম। বেসনের সাথে কি কি মিশ্রণ যুক্ত করে ত্বক মসৃণ করে তুলতে পারেন নিচে কিছু নিয়ম জানিয়ে দিলাম।
-
এক চামচ বেসনের সাথে এক চামচ মধু মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন, এরপর এটিকে
ভালোভাবে মুখে লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানিতে ধুয়ে ফেলুন ।
নিয়মিত এটি ব্যবহার করলে আপনার ত্বক আর শুষ্ক হবে না।
-
এক চামচ বেসনের সাথে পরিমাণ মতো এলোভেরা জেল ভালোভাবে মিস করে সেটি ব্যবহার
করুন, এরপর ১৫ মিনিট পর ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে প্রতিদিন ব্যবহার করলে
দেখবেন চামড়ার কুচকানো ভাব আস্তে আস্তে চলে যাবে।
-
বেসন এক চামচ চালের আটা এক চামচ একসাথে মিশিয়ে নিয়ে এটি নিয়মিত মুখে ব্যবহার
করুন। ব্যবহারের ১০মিনিট পর ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। এতে করে দেখবেন আপনার
ত্বক আগের চেয়ে অনেক বেশি মসৃণ হয়ে যাবে।
-
দুই টেবিল চামচ বেসন ১ টেবিল চামচ কাঁচা দুধ আধা টেবিল চামচ
মধু একসঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে ব্যবহার করুন।
ব্যবহারের ১৫ মিনিট পর হালকা গরম পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। এইভাবে
সপ্তাহে অন্তত দুইদিন ব্যবহার করলে আপনার ত্বক আগের চেয়ে অনেক মসৃণ ও উজ্জ্বল
থাকবে।
উজ্জ্বলতা ও ট্যান দূর করতে বেসনের কার্যকারিতা
উজ্জ্বল ও ট্যান মুক্ত ত্বক কে না চায় তবে সমস্যার বিষয় হল বাংলাদেশ ও ভারতীয় উপমহাদেশে রৌদ্রের তীব্র তাপের কারণে ত্বক উজ্জ্বলতা হারায় ট্যান পড়ে যায়। এতে করে ত্বকে কালচে ভাব দেখা যায় এবং ত্বক তার নিজস্ব উজ্জ্বলতা হারিয়ে ফেলে। আর আমরা এর থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য বাজারের কেমিক্যাল যুক্ত রং ফর্সা হওয়া অনেক ক্রিম ব্যবহার করে।
এতে করে হয়তো আমরা সাময়িকভাবে উপকৃত হই। আমরা অনেকেই খেয়াল করি না কেমিক্যাল
থাকায় এসব ক্রিম ত্বকের জন্য অনেক ক্ষতিকর হয়ে থাকে। অথচ প্রাচীন যুগ থেকেই
রূপচর্চার জন্য মানুষ বেসন ব্যবহার করে আসছে যা ন্যাচারাল ও প্রাকৃতিক জিনিস। এতে
করে ত্বকের উপর কোন ধরনের খারাপ প্রভাব পড়ে না। এবং ত্বক বিভিন্ন সময় বড় ধরনের
ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেয়ে যায়। যেভাবে বেসন ট্যান দূর করে
-
মূলত ত্বকের উপরে স্তরে জমা হয়। বেসন স্ক্রাব এর মত কাজ করে থাকে, ত্বকের
মৃত কোষ গুলোকে দূর করে নতুন কোষ জন্মাতে সাহায্য করে।
- বেসনে থাকা বিদ্যামান ভিটামিন ও খনিজ ত্বকের পুষ্টি যুগিয়ে উজ্জ্বলতার ফিরিয়ে আনতে ব্যাপক সহযোগিতা করে থাকে।
-
নিয়মিত বেসন ব্যবহারে ত্বকের রোদে পোড়া দাগ ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায় যেতে
থাকে।
-
এক চামচ বেসনের সাথে হাফ চামচ কফি পাউডার মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন , এবং এই
পেস্ট মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন । সপ্তাহে অন্তত দুদিন ব্যবহারে
আপনার রোদে পুরা দাগ দেখবেন ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেছে।
-
দুই টেবিল চামচ বেসন এক টেবিল চামচ টক দই এবং কয়েক ফোঁটা লেবুর রস একসাথে
মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে পুরো মুখে লাগিয়ে ফেলুন এবং শুকিয়ে গেলে
আলতো করে ঘোষে ধুয়ে ফেলুন। এই পেস্ট সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন ব্যবহার করলে
ত্বকের ট্যান দূর হয়ে যাবে এবং ফিরে আসবে আসল উজ্জ্বলতা।
ব্রণের দাগ কমাতে বেসনের ব্যবহার
নির্দিষ্ট একটা বয়সে এসে আমরা ব্রণের দাগ নিয়ে ভীষণ দুশ্চিন্তায় করে থাকি। কি
করলে এই দাগ দূর হবে বা কি ব্যবহার করলে দাগ কমে আসবে এ নিয়ে থাকে নানা
চিন্তা ও ভাবনা। ব্রণ ও দাগের ঘরোয়া সমাধান কি হতে পারে সবার কাছ থেকে
পরামর্শ নিয়ে থাকি। সবশেষে আমরা বাজারের কেমিক্যাল যুক্ত ক্রিম কিনে আনি এবং
ব্যবহার করতে থাকি। এতে করে আমাদের তো শুষ্ক হয়ে যায়, প্রাকৃতিক উপায় এ তৈরি
বেসন আমাদের এসব সমস্যা থেকে কার্যকারী সমাধান দিতে পারে।
-
বেসন আমাদের ত্বকের অতিরিক্ত তৈলাক্ত ভাব পরিষ্কার রাখতে পারে। এতে করে ব্রণ
হওয়ার প্রবণতা অনেক কমে যায়।
-
বেসনে অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াল উপাদান থাকার কারণে ত্বকের বিভিন্ন ধরনের
ব্যাকটেরিয়া ওপর প্রতিরোধ গড়ে তোলেন, এসব ব্যাকটেরিয়া ব্রোন হওয়ার মূল
কারণ।
- বেসন ত্বকের লালচে ভাব ও ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
ঘরোয়া পদ্ধতিতে ব্রনের দাগের জন্য ফেসমাক্স তৈরি
- এক টেবিল চামচ বেসন, আধা চা চামচ কাঁচা হলুদ গুঁড়ো, এবং এক টেবিল চামচ গোলাপজল একত্রে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করতে হবে। তৈরি হয়ে গেলে এই পেজটি ব্রনের জায়গায় লাগিয়ে রাখতে হবে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে তিন দিন ব্যবহার করলে ব্রণের দাগ অনেকটা হালকা হয়ে যাবে।
বেসন দিয়ে চুলের যত্ন যেভাবে নিবেন
বেসন দিয়ে রূপচর্চা করলেই শুধু হবে না বরং চুল ও ত্বকের স্কাল্পের উপর বেসন অনেক উপকারী ভূমিকা পালন করে। চুলের যত্নে আমরা সাধারণত শ্যাম্পু ব্যবহার করে থাকি অথচ এই শ্যাম্প ব্যবহারের ফলে আমরা অধিকাংশ সময়ের হেয়ার ফল সমস্যায় পড়ে থাকি। আমরা অনেকেই আছি জানিনা প্রাচীনকাল থেকেই চুল মজবুত ও মসৃণ করার জন্য শ্যামপর বিকল্প হিসেবে বেসন ব্যবহার হয়ে আসছে। আসুন আমরা ভালো করে জেনে নিব চুল ও স্কাল্পের উপর বেসন এর কার্যকারিতা।
-
বেসন অতিরিক্ত তেল ও ময়লা পরিষ্কার করে চুল ভালো রাখতে পারে এজন্য
শ্যামপর বিকল্প হিসেবে বেসন ব্যবহার করতে পারেন।
- শুষ্ক ও তৈলাক্ত ত্বকের খুশকি দূর করতে বেসন অনেক কার্যকরী।
-
পেছনে থাকা প্রোটিন চুলকে অনেক মজবুত করে তোলে যার কারণে চুল ভেঙে যাওয়া বা
চুল পড়ে যাওয়া সমস্যা অনেক দূর হয়ে যায়।
- মাথার ত্বকে বেসন ব্যবহারে চুল অনেক ঘন ও নরম দেখাই।
চুলের যত্নে বেসন যেভাবে ব্যবহার করবেন তা হলো তিন টেবিল চামচ বেসন, আধা কাপ
টক দই, এক চা চামচ লেবুর রস একত্রে করে মিশিয়ে থেকে আগ পর্যন্ত ভালোভাবে
লাগাবেন, ৩০ মিনিট পর ভালো মানের হালকা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন সপ্তাহে
অন্তত একবার ব্যবহার করলে চুলের গোড়া অনেক মজবুত হবে খুশকি কমবে চুল নরম ও
সুন্দর দেখাবে।
বেসন ব্যবহারে সতর্কতা
বেসন যদিও বা প্রাকৃতিক জিনিস ক্ষতিকর দিক তেমন একটা থাকে না, তবুও কিছু কিছু
ক্ষেত্রে বেসন ব্যবহারে সর্তকতা অবলম্বন করা উচিত। বেসনের ভুল ব্যবহার আপনার
জন্য উপকার না হয়ে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই আসুন আমরা বেসন ব্যবহারে
কি কি সর্তকতা অবলম্বন করা উচিত তা ভালোভাবে জেনে নিব আজকে।
-
প্রতিদিন একাধিকবার বেসন বেসন ব্যবহার থেকে আমরা দূরে থাকি। কেননা অতিরিক্ত
বেসন ব্যবহারে ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে।
-
অনেকের ত্বকে বেসন ব্যবহারের ফলে এলার্জির সমস্যা দেখা যায়, লালচে বা খোশকুরের
মত দেখা দিতে পারে সেজন্য আমরা হাতে বা কানের পিছনে অল্প একটু করে লাগিয়ে
অপেক্ষা করে দেখবো এলার্জির কোন সমস্যা দেখা যায় কিনা।
-
বেসনের সাথে লেবু মেশানোর সময় বেশি মাত্রায় মেশাবেন না, লেবু ত্বকের
উজ্জ্বলতা বাড়ালেও অতিরিক্ত লেবুর রস ত্বক শুষ্ক ও জ্বালাপোড়ার কারণ হতে
পারে।
- বেসনের গুড়ো বা পাউডার চোখে গেলে চোখ জ্বালাপোড়া করতে পারে, সেজন্য বেসন ব্যবহারের সময় চোখও ঠোঁটে ব্যবহার করবেন না।র
-
সংবেদনশীল ত্বকে বেসন সাবধানে সাথে ব্যবহার করবেন, অতিরিক্ত সংবেদনশীল ত্বকে
বেসন ব্যবহারের ফলে অনেক সময় লালচে ভাব বা ফুসকুড়ি দেখা দেয় তাই অবশ্যই
যাদের এই সমস্যা আছে তারা ডার্মাটোলজিস্ট এর পরামর্শ নিবেন।
উপসংহার
রূপচর্চায় বেসনের এত উপকার থাকা সত্ত্বেও আমরা অনেকেই এসব জানি না বা জেনেও
আধুনিকতার ছোঁয়ায় এসব প্রাকৃতিক উপাদান থেকে দূরে থাকি। ব্যবহারকরি নানান
কসমেটিক। আর এসব কসমেটিক ব্যবহারে অনেক সময় বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়ে
থাকি। আমার এই পোস্টটি যদি আপনি সম্পূর্ণ পড়ে থাকেন আশা করি জেনে গেছেন
রূপচর্চায় বেসনের উপকারিতা সম্পর্কে, এবং কিভাবে চুলের যত্ন নেওয়ায় এটি ব্যবহার
করা যায়। তাই আসুন আমরা প্রাকৃতিক জিনিসের ওপর নির্ভর করি এবং জীবনকে
সুন্দর করে গড়ে তুলি। বেসনকে ভাজাপোড়া খাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ না রেখে আমাদের
দৈনন্দিন জীবনের সর্ব ক্ষেত্রেই বেসন ব্যবহার করি।
আপনার মুল্যবান মতামত এখানে টাইপ করুন।প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url